রাস্তায় চলাচল করা রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার (২১ জুন) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে আমু এ তথ্য জানান।
সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাবাহিনী জানিয়েছে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন (রেজিস্ট্রেশনবিহীন) মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সেটা পার্মানেন্টলি (স্থায়ীভাবে) বাজেয়াপ্ত করা হবে। আর ফেরত দেওয়া হবে না।’
শুধু ঈদকে সামনে রেখে নয় সারা বছরই মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ চলবে জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ যারা এগুলো দেখে তারাই বাজেয়াপ্ত করবে। এটার জন্য বিশেষ আইনের দরকার নেই।’
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি কার্যক্রম বিশেষ করে হলি আর্টিজান ঘটনার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানোর ফলে তাদের কার্যক্রম ধ্বংস করা হয়েছে যা বিশ্বে আর কোথাও ঘটেনি। এটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে। এজন্য তাদের বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। প্রশংসা করি ও ধন্যবাদ জানাই।’
‘আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা শহরে ৪১০টি ঈদের জামাতসহ সারাদেশের ঈদের জামাতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ঈদে ঢাকা শহরে কূটনৈতিক এলাকাসহ শপিংমল ও বিভিন্ন টার্মিনালে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে’ বলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।
এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর শোলাকিয়ায় একটা অপচেষ্টা করা হয়েছিল। এ ধরণের ঘটনা যাতে ঘটাবার সুযোগ না থাকে সেই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে তারা কিছু ইয়াবা তৈরিকারীকে গ্রেফতার করেছে। গত কয়েক মাসে মাদকের অপব্যবহার রোধে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় সাফল্য পাওয়া গেছে।’
মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আরও বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সারাদেশে ২ হাজার ৯৭১টি অভিযান পরিচালনা করে ৯৭৯ জন মাদক অপরাধীর বিরুদ্ধে ৮৯১টি মামলা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ নিয়ে সভায়ও সভাপতিত্ব করেন আমির হোসেন আমু।
গোয়েন্দাদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থে অস্বাভাবিক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে বা অনুরূপ কোন হিসাবের খোঁজ পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গোয়েন্দাবাহিনীকে জানাবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ও বিকাশের বিনিয়োগ করা অর্থ কোন জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত হয় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় কুরিয়ার সার্ভিস, বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, এনজিওতে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা সতর্কতার সাথে দেখা হচ্ছে এবং নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
‘সন্ত্রাসের আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিরোধে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ও কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার বা তোমার গ্রাহককে জানো) ফরম দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে- এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সীমান্তে অবৈধ অর্থের লেনদেন, আদান-প্রদান, চলাচল ও স্থানান্তরের বিষয়ে নজরদারি চলছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আমু।
সীমান্ত এলাকায় মঙ্গলবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ দু’জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশে পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হবে কিনা- এ বিষয়ে আমু বলেন, ‘এটা এখানে আলোচনার ব্যাপার না, এটা কূটনৈতিক ব্যাপার। বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে এটা নিয়ে ফ্ল্যাগ বৈঠক হবে। এছাড়া আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা হচ্ছে।’
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।